ডাহুক ডাহুক ডাহুক

ENGLISH VERSION Bilingual Anthology Photo Album Contact Dahuk Selected Poems Our Pride Building Bridges

পরাণের গহীন ভিতর/ সৈয়দ শামসুল হক


সে তোমার পাওনার এতটুক পরোয়া করে না

খেলা যে দেখায় তার দ্যাখানের ইচ্ছায় দেখায়,

ডাহুক উড়ায়া দিয়া তারপর আবার ধরে না

সোনার মোহর তার পড়া থাকে পথের ধুলায়।

এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর

যে তার রুমাল নাড়ে পরাণের গহীন ভিতর!


আবুল হাসান

"ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও

ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।"


 

আমাদের অনেকগুলো 'আগামীকাল'

'গতকাল' হয়ে গ্যাছে

'ধরি মাছ, না ছুঁই পানি' করতে করতে

লাঠি না ভেঙ্গে --

সাপ মারার আশায় আশায়

আমাদের চোখের মনিইতো গলে গ্যালো;

আয়োজন গ্যালো আহ্লাদে

আহ্লাদ গ্যালো মননে

মনন পুড়লো আগুনে। উনুনে। উল্লম্ফনে।

আমাদের স্বপ্ন এখন ভস্ম ছাড়া আর কিছু নয়! 


নির্মলেন্দু গুণঃ হুলিয়া

মহাদেব সাহাঃ আমার খাতার শেষ তিনটি শাদা পৃষ্ঠা

পাখী আমার একলা পাখী

"যদিও তুমি আমাকে অনুক্ষণ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছো, আমি তোমাকে অমৃত করে দিলাম। আমার মনের হিজলের শাখা থেকে মুক্ত করে, আমার একান্ত পাখিকে আকাশের করে দিলাম।"


এ-কথাই সব সময় ভাবি--আবার একটি আগামীকাল আসবে। ঔৎসুক্য নিয়ে দূরের দিকে তাকাই, অনেক সকালে পথ-ঘাট শব্দহীন, রুদ্ধ জানালাগুলো স্তব্ধ হয়ে আছে, আকাশ অস্পষ্ট, শুধু কয়েকটি কাক পাখা ঝাপ্‌টিয়ে উড়ে যায়। আজ সকাল বেলায় আমার অতীত যেন মুছে গেল এবং প্রতিমুহূর্তে ভবিষ্যৎ যেন শিশিরবিন্দুর মতো ঝরে পড়লো। আমার পৃথিবী যেন প্রত্যাবর্তনহীন দ্বীপান্তর। আমগাছগুলো কি চিরকাল এরকম ছায়া ফেলবে? মাটিতে ঘরবাড়িগুলো একই রকম দাঁড়িয়ে থাকবে? প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই, জনপদের কুয়াশায় একটি সকাল জাগছে, ক্রমশঃ সূর্যের রূপায় হারিয়ে যাচ্ছে, শব্দহীন সময় অনেক কথায় ভরে যাচ্ছে এবং আজকের দিনটি শেষ হলেই আগামীকাল আসবে। এ-ভাবে যদি চিরকাল বর্তমান শেষ হয়ে নতুন বর্তমান আসে, তা হলে আমার যাত্রার আরম্ভ কোথায়, শেষই বা কোথায়?


 

 

ঊষার উদয়সম অনবগুন্ঠিতা, তুমি অকুন্ঠিতা


বৃষ্টির ফোঁটাকে মনে হয়, তোমার পায়ের পাতার শব্দ।

পাতার শব্দকে মনে হয়, তোমার গাড়ীর আওয়াজ!

আমি চক্ষু সজাগ করি, কান উৎকর্ণ, ইন্দ্রিয় অটুট।

তুমি আসছো না, তুমি আসছো না

তোমার কত হাজার বৎসর লাগবে আসতে?


"যদিও তুমি আমাকে অনুক্ষণ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছো, আমি তোমাকে অমৃত করে দিলাম। আমার মনের হিজলের শাখা থেকে মুক্ত করে, আমার একান্ত পাখিকে আকাশের করে দিলাম।"


যখন সন্ধ্যায় গৃহকপোতগুলো একটি অন্তরাল সন্ধান করছিলো, যখন লম্বা ঘাসের পাতা রৌদ্র হারিয়ে ঠান্ডা বাতাসের সাড়া শুনছিলো, যখন আম গাছের ঘনপাতার অন্ধকারে সূর্য ডুবলো -- তখন তুমি সময় গণনা করে একটি শুভ্র শয্যায় হাত রাখলে।

তোমার মনের অনিশ্চয় চিন্তার মতো প্রদীপের শিখা কেঁপেছিলো, যখন একটি অস্তিত্বের প্রস্তাবের মতো তুমি বেদনার মধ্যে পদশব্দ শুনছিলে। রাজহাঁসের পাখার শুভ্রতার মতো অনেক বিশুদ্ধ চিন্তাকে তুমি স্মরণ করছিলে, এবং অনবরত মহাপুরুষদের কথা ভাবছিলে একটি প্রশান্তির অধিকারে।

অশ্রুবিন্দু মুক্তার মতো এবং শুনেছি তখন তোমাকে সুন্দর দেখাতো, কিন্তু সে-রাত্রে তুমি অবাক হয়ে ভাবছিলে কেন তোমার চোখে পানি নামলো না। যন্ত্রণার একটি বিমুগ্ধ তন্ময়তায় তুমি আমাকে জন্ম দিলে, রোরুদ্যমান অসহায় মানব শিশু তোমার স্তনের ছায়ায় নিদ্রিত হলো।

মা, আমি বড় হয়ে তোমার ইচ্ছাকে পূর্ণ করতে পারলাম না। বাতাসে প্রদীপের শিখার মতো অসহায় আমি মহাপুরুষ হতে ভয় পেলাম। রৌদ্রে প্রজাপতির ডানার আড়ালে রক্তগোলাপকে দেখে, আমি সাধারণ মানুষের আগ্রহ এবং দুঃখের মধ্যে একজন একাকী কবি হলাম!


তোমার যে-চোখে

       বরফের কুচির মতো

            সূর্য খেলা করেছিলো,

সে-চোখে এখন হয়তো

       শীতের মতো জমাট

            দৃষ্টিহীনতার ছায়া।

আমি আমার আসক্তির

            শেষ বিকেলে

সময়কে খোলা পাতার মতো

             উড়িয়ে দেবো।



পথ চলা আমার থাক

তোমার থাকুক শুধু পথ,

আকন্ঠ গ্লানিরা আমার

বেড়ে উঠুক প্রিয়তম ক্ষত,

তোমার থাকুক

শুধু শেফালী সকাল।