রঙধনু
রঙধনু ছড়িয়ে চেতনার আকাশে
আমার সমস্ত গন্তব্যে --
তবে তার অর্থ এই নয় যে,
আমি কখনও যুদ্ধে যাবো না,
কখনও ভালোবাসবো না,
গান শুনবো না।
তবে হ্যাঁ,
যদি বলো--এই যে বন উজাড় করতে করতে
এগিয়ে চলছে সভ্যতা
তাকে স্বীকৃতি দাও
আমি বলবো - 'না'।
যদি বলো--বাজারে তো অনেক কিছুই পাওয়া যায়
একটি ময়ুরপুচ্ছ কিনে সুদৃশ্য ময়ুর সেজে যাওনা কেনো?
আমি বলবো - 'না'।
যদি বলো -
ঐ যে রুদ্ধদ্বার কক্ষে বৈঠকে
বসেছে মূর্খ মহাজনেরা,
শুধু একবার নত মস্তকে ঈষৎ ঝুঁকে পড়ে
নিজের যা কিছু আর্জি
সেখানে পেশ করো--কবুল হবে সব!
আমি বলবো - 'না'।
(না, জরিনা আখতার)
গদ্য কবিতাঃ কামরুন জিনিয়া
সভ্যতা হচ্ছে একটি হীরের টুকরো, আর সে টুকরো থেকে বিচ্ছুরিত আলোই হচ্ছে সংস্কৃতি -- রবীন্দ্রনাথ
তোমার কন্ঠ থেকে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দই
কবিতা কেন লিখি?
কারণ কবিতা আমার ফুসফুসের হাওয়া
কবিতা পরিপার্শ্ব। কবিতা মায়ের
আঁচলে রোদ, মাচানে কুমড়ো ফুল,
ঝিঙে-লাউ-সজ্নের ডাটা।
কবিতা পৌষের উঠোনে পূর্ণিমা,
তিতাসের জলের প্রসাদ।
কবিতা ধান কুড়ানিয়া পাখি, বিষন্ন শালিক।
কবিতা দড়িতে-ছড়ানো মেঘ,
বিধবার শাড়ি, যুঁইফুল।
কবিতা রক্তাক্ত ক্ষত, নিহত কৃষ্ণচূড়া, দুঃখের দেহ।
কবিতা কদর্য ক্ষুধা, শুয়োর ছানার মতো
একপাল দুর্গন্ধ শিশু।
কবিতা দুরন্ত ক্রোধ।
কবিতা আকাশ-জোড়া সুনীল ঘৃণা।
কবিতা মায়ের কবরে ঘাস, ঘাসে বুনোফুল।
কবিতা আমার দেড় বছরের মেয়ে 'কাকাতুয়া'।
কবিতা জোছনায় রোদ পোহানো এক আশ্চর্য নারী।
কবিতা বলা-না-বলা অনুভব, আলিঙ্গন -- সবকিছু।
কবিতা আমার ফুসফুসের হাওয়া।
(আবু জাফর ওবায়দুল্ললাহ)
উচ্চারণ
যখন সন্ধ্যায় গৃহকপোতগুলো
একটি অন্তরাল সন্ধান করছিলো,
যখন লম্বা ঘাসের পাতা রৌদ্র হারিয়ে
ঠান্ডা বাতাসের সাড়া শুনছিলো,
যখন আম গাছের ঘন পাতার অন্ধকারে
সূর্য ডুবলো --
তখন তুমি সময় গননা করে
একটি শুভ্র শয্যায় হাত রাখলে।
তোমার মনের অনিশ্চয় চিন্তার মতো
প্রদীপের শিখা কেঁপেছিলো,
যখন একটি অস্তিত্বের প্রস্তাবের মতো
তুমি বেদনার মধ্যে পদশব্দ শুনছিলে।
রাজহাঁসের পাখার শুভ্রতার মতো
অনেক বিশুদ্ধ চিন্তাকে তুমি স্মরণ করছিলে
এবং অনবরত মহাপুরুষদের কথা ভাবছিলে
একটি প্রশান্তির অধিকারে।
অশ্রুবিন্দু মুক্তার মতো এবং শুনেছি
তখন তোমাকে সুন্দর দেখাতো,
কিন্তু সে-রাত্রে তুমি অবাক হয়ে ভাবছিলে
কেন তোমার চোখে পানি নামলো না --
যন্ত্রণার একটি বিমুগ্ধ তন্ময়তায়
তুমি আমাকে জন্ম দিলে,
রোরুদ্যমান অসহায় মানব শিশু
তোমার স্তনের ছায়ায় নিদ্রিত হলো।
মা, আমি বড় হয়ে তোমার ইচ্ছাকে
পূর্ণ করতে পারলাম না।
বাতাসে প্রদীপের শিখার মতো অসহায় আমি
মহাপুরুষ হতে ভয় পেলাম--
রৌদ্রে প্রজাপতির ডানার আড়ালে
রক্তগোলাপকে দেখে,
আমি সাধারণ মানুষের আগ্রহ এবং দুঃখের মধ্যে
একজন একাকী কবি হলাম।
এখন ফেরা অসম্ভবঃ কামরুন জিনিয়া