রঙধনু

ENGLISH VERSION Bilingual Anthology Photo Album Contact Dahuk Selected Poems Our Pride Building Bridges

রঙধনু ছড়িয়ে চেতনার আকাশে


 

সুদৃঢ় খিলান হয়ে 'না' শব্দটি দাঁড়িয়ে আছে

আমার সমস্ত গন্তব্যে --

তবে তার অর্থ এই নয় যে,

আমি কখনও যুদ্ধে যাবো না,

কখনও ভালোবাসবো না,

গান শুনবো না।

তবে হ্যাঁ,

যদি বলো--এই যে বন উজাড় করতে করতে

এগিয়ে চলছে সভ্যতা

তাকে স্বীকৃতি দাও

আমি বলবো - 'না'।

যদি বলো--বাজারে তো অনেক কিছুই পাওয়া যায়

একটি ময়ুরপুচ্ছ কিনে সুদৃশ্য ময়ুর সেজে যাওনা কেনো?

আমি বলবো - 'না'।

যদি বলো -

ঐ যে রুদ্ধদ্বার কক্ষে বৈঠকে

বসেছে মূর্খ মহাজনেরা,

শুধু একবার নত মস্তকে ঈষৎ ঝুঁকে পড়ে

নিজের যা কিছু আর্জি

সেখানে পেশ করো--কবুল হবে সব!

আমি বলবো - 'না'।

(না, জরিনা আখতার)


গদ্য কবিতাঃ কামরুন জিনিয়া

সভ্যতা হচ্ছে একটি হীরের টুকরো, আর সে টুকরো থেকে বিচ্ছুরিত আলোই হচ্ছে সংস্কৃতি -- রবীন্দ্রনাথ


তোমার কন্ঠ থেকে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দই আমার কানে কবিতা হয়ে যায়। অতি পরিচিত শব্দও হঠাৎ হয়ে যায় সমুদ্র।তোমার হাসি আমার কাছে সম্মিলিত কল্লোল ফুল ফুটুক, আর নাই ফুটুক – সেদিন বসন্ত! একসময় বিমুগ্ধ বিষ্ময়ে আবিষ্কার করি আমি বার বারই তোমার প্রেমে পড়েছি ‘তোমাকে ভালোবাসি’। তবে তার মানে এই না যে, তোমাকে না পেলে সংসার ত্যাগ করবো, কান্নার বৃষ্টিতে আকুল হবো, আত্মহননের পথ বেছে নেবো। অথবা কবির মতো মিনতি করে বলবোঃ ‘আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ আমাকে গ্রহন করো’। কারণ, ধূলির সন্তান ধূলি নিয়ে খেলতে জানে। কারণ, যে পথে শুধু পাতা ঝরার শব্দ, সে পথে আমি হেঁটেছি হাজার বছর। কারণ, শেষহীন আকাশে বিরামহীন উড়ে না ঘুমিয়ে আমি কাটিয়ে দিতে পারি অগনন প্রহর। এবং মানুষ মূলতঃই প্রেমজীবি। নার্সিসাস, আজও নার্সিসাস! হয়তো তোমার অনুযোগই সঠিক এখনও আমি সেই নার্সিসীয় বলয়েই রয়ে গেছি। (নার্সিসাস আজও, কামরুন জিনিয়া)
গহন শূণ্যতাঃ কামরুন জিনিয়া
বিমর্ষ মেঘ আজও আকাশে অপেক্ষা করছে আমার হৃদয় বিচলিত নদীর মতো অপসৃয়মান সন্ধ্যার কথা ভাবলো একটি বুদবুদ, অনেক বুদবুদ -- অনেক নিবেদনের ফুল আর তারা এবং পৃথিবীতে প্রদীপের মতো সমস্ত জন্ম এবং আনন্দের মতো সমস্ত বিস্তার পরিপূর্ণতার কি এক বিপুল সর্বস্বস্ত অনেক পাখী, একটি পাখী -- একটি মধুর কন্ঠস্বর এক ঝাঁক পায়রা ডানা মেলে আকাশে উড়লো তবুও হৃদয় শীত-সকালের নিঃশ্বাসের মতো এবং আকাশে বিমর্ষ মেঘের অপেক্ষার মতো। এ-হৃদয় দেহের বিভাব এ-আলম্বন মুক্ত হ'য়ে হৃদয়ের সমৃদ্ধি হ'ল না জান্‌লা খুলে বাইরের দিকে চেয়ে আছি প্রজাপতির মতো বাতাস আর পাখীদের ঘুমের মতো নিম গাছের পাতায় অল্প অল্প রোদ আনন্দের কি আশ্চর্য সঞ্চার তবু আজ জীণতার সম্ভাবনায় আমি বিচলিত হে হৃদয়, আমার কি মুক্তি নেই? (হৃদয়, সৈয়দ আলী আহসান) 

 

কবিতা কেন লিখি?


কবিতা কেন লিখি?

কারণ কবিতা আমার ফুসফুসের হাওয়া

কবিতা পরিপার্শ্ব। কবিতা মায়ের

আঁচলে রোদ, মাচানে কুমড়ো ফুল,

ঝিঙে-লাউ-সজ্‌নের ডাটা।

কবিতা পৌষের উঠোনে পূর্ণিমা,

তিতাসের জলের প্রসাদ।

কবিতা ধান কুড়ানিয়া পাখি, বিষন্ন শালিক।

কবিতা দড়িতে-ছড়ানো মেঘ,

বিধবার শাড়ি, যুঁইফুল।

কবিতা রক্তাক্ত ক্ষত, নিহত কৃষ্ণচূড়া, দুঃখের দেহ।

কবিতা কদর্য ক্ষুধা, শুয়োর ছানার মতো

একপাল দুর্গন্ধ শিশু।

কবিতা দুরন্ত ক্রোধ।

কবিতা আকাশ-জোড়া সুনীল ঘৃণা।

কবিতা মায়ের কবরে ঘাস, ঘাসে বুনোফুল।

কবিতা আমার দেড় বছরের মেয়ে 'কাকাতুয়া'।

কবিতা জোছনায় রোদ পোহানো এক আশ্চর্য নারী।

কবিতা বলা-না-বলা অনুভব, আলিঙ্গন -- সবকিছু।

কবিতা আমার ফুসফুসের হাওয়া।

(আবু জাফর ওবায়দুল্ললাহ)


উচ্চারণ

যখন সন্ধ্যায় গৃহকপোতগুলো

একটি অন্তরাল সন্ধান করছিলো,

যখন লম্বা ঘাসের পাতা রৌদ্র হারিয়ে

ঠান্ডা বাতাসের সাড়া শুনছিলো,

যখন আম গাছের ঘন পাতার অন্ধকারে

সূর্য ডুবলো --

তখন তুমি সময় গননা করে

একটি শুভ্র শয্যায় হাত রাখলে।

তোমার মনের অনিশ্চয় চিন্তার মতো

প্রদীপের শিখা কেঁপেছিলো,

যখন একটি অস্তিত্বের প্রস্তাবের মতো

তুমি বেদনার মধ্যে পদশব্দ শুনছিলে।

রাজহাঁসের পাখার শুভ্রতার মতো

অনেক বিশুদ্ধ চিন্তাকে তুমি স্মরণ করছিলে

এবং অনবরত মহাপুরুষদের কথা ভাবছিলে

একটি প্রশান্তির অধিকারে।

অশ্রুবিন্দু মুক্তার মতো এবং শুনেছি

তখন তোমাকে সুন্দর দেখাতো,

কিন্তু সে-রাত্রে তুমি অবাক হয়ে ভাবছিলে

কেন তোমার চোখে পানি নামলো না --

যন্ত্রণার একটি বিমুগ্ধ তন্ময়তায়

তুমি আমাকে জন্ম দিলে,

রোরুদ্যমান অসহায় মানব শিশু

তোমার স্তনের ছায়ায় নিদ্রিত হলো।

মা, আমি বড় হয়ে তোমার ইচ্ছাকে

পূর্ণ করতে পারলাম না।

বাতাসে প্রদীপের শিখার মতো অসহায় আমি

মহাপুরুষ হতে ভয় পেলাম--

রৌদ্রে প্রজাপতির ডানার আড়ালে

রক্তগোলাপকে দেখে,

আমি সাধারণ মানুষের আগ্রহ এবং দুঃখের মধ্যে

একজন একাকী কবি হলাম।


 

 

 

 


এখন ফেরা অসম্ভবঃ কামরুন জিনিয়া


আলোর নাচন পাতায় পাতায়

কুমারী নদীর মতো অমিমাংসিত বিষ্ময়